জুমাদাল আখিরাহ-শাবান ১৪৪৪   ||   জানুয়ারি-মার্চ ২০২৩

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.
নবীজীর হিজরতের সাথী, ইসলামের প্রথম খলীফা

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব

দুনিয়ার জীবনেই যারা জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেছেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. তাদের একজন। এক হাদীসে দশজন সাহাবী সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এরা জান্নাতী। সে তালিকায় প্রথমেই রয়েছে হযরত আবু বকর রা.-এর নাম।

নবীজীর অত্যন্ত প্রিয় সাহাবী তিনি। সুখ-দুঃখের সাথী। মক্কায় জন্ম। মক্কায় বেড়ে ওঠা। কুরাইশ বংশের লোক।

ইসলামের শুরু থেকেই তিনি নবীজীর সাথে ছিলেন। মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরতের দিনেও ছিলেন একমাত্র সাথী। সে ঘটনা হাদীস শরীফে যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে কুরআনেও।

ইসলামের শুরু যুগে মোট তেরো বছর নবীজী মক্কায় ছিলেন। তখন কাফের মুশরিকদের অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন। এরপর মদীনায় হিজরতের অনুমতি পেয়েছেন।

সাহাবীগণ যখন মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করছেন, তখন আবু বকর রা.কে নবীজী বললেন, তুমি একটু অপেক্ষা করো। আশা করি আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেওয়া হবে।

কিছুদিন পর অনুমতি পেলেন। সেই সংবাদ শুনে আবু বকর কেঁদে ফেললেন। নবীজীর হিজরতের সাথী হতে পারার আনন্দে ছিল সেই কান্না।

জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন নবীজী। সঙ্গে প্রিয় সাহাবী আবু বকর। পেছনে কাফের লোকজন।

ছাওর পাহাড়ের একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। কাফেররা খুঁজে বেড়াচ্ছে তাঁদেরকে। এমন সময় গুহার ভিতর থেকে আবু বকর রা. দেখতে পেলেন কাফের বাহিনীকে। নবীজীকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কেউ যদি  নিজের পায়ের দিকে তাকায় তাহলেই আমাদেরকে দেখে ফেলবে! নবীজী বললেন, হে আবু বকর! সেই দুজনের ব্যাপারে তোমার কী ধারণা, যাদের তৃতীয়জন হলেন আল্লাহ! অর্থাৎ তুমি আর আমি দু-জন ঠিকই। তবে আমাদের সাথে আছেন আল্লাহ। আমাদের ভয় কীসের!

কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহ তাআলার প্রতি এমন আস্থা ও ভরসা রাখা নবীজীর শিক্ষা।

* * *

ইসলামের জন্য হযরত আবু বকর রা. নিজের জান ও মাল অকাতরে বিলিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উপর যে সকল মানুষের অনুগ্রহ রয়েছে সবাইকে উপযুক্ত প্রতিদান দিয়েছি, আবু বকর ছাড়া। আমার উপর তার এত অনুগ্রহ যে, তার প্রতিদান আল্লাহ তাআলাই দিবেন, কিয়ামতের দিন।

আরেকদিন নবীজী বলেছেন, আবু বকরের সম্পদ আমাকে যে পরিমাণ উপকার করেছে আর কারো সম্পদ এমন উপকার করেনি। এ কথা শুনে আবু বকর রা. কেঁদে ফেললেন। বললেন, আমি আর আমার সম্পদ তো আপনারই হে আল্লাহর রাসূল।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বললেন, কিয়ামতের দিন কাউকে নামাযের দরজা দিয়ে জান্নাতে আহ্বান করা হবে। কাউকে জিহাদের দরজা দিয়ে। কাউকে দান-সদকার দরজা দিয়ে। কাউকে রোযার দরজা দিয়ে...। এরপর আবু বকর রা.-কে বললেন, আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে, যাদেরকে সকল দরজা দিয়ে জান্নাতে আহ্বান করা হবে।

* * *

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকালের পর হযরত আবু বকর রা. খলীফা নির্বাচিত হলেন। ইসলামের প্রথম খলীফা। কিন্তু তাঁর জীবন যাপন ছিল অতিসাধারণ মানুষের মতোই।

খেলাফতের দায়িত্ব পাওয়ার পর একদিন তিনি কিছু কাপড় কাঁধে নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন, পরিবারের খরচ জোগাতে কাপড়ের ব্যবসা করবেন বলে। পথে দেখা হয়ে গেল উমর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা.-এর সাথে। তাঁরা তাকে ফিরিয়ে আনলেন।

এমনই ছিল তার সরলতা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো রাষ্ট্রপ্রধান পাওয়া যাবে কি, যে রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার পরও পরিবারের আহার জোগাতে কামাই রোজগারে বের হবার চিন্তা করেছে?!

মহান এই খলীফা ১৩ হিজরীতে এক জুমার দিন ইনতিকাল করেন। নবীজীর পাশেই তাঁর কবর।

তথ্যসূত্র : সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৯৭, ৩৬৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৮১; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৬৬১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৯৪; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ, হাদীস ১১৬১; তাবাকাতে ইবনে সাদ ৩/১৩৭; উসদুল গাবাহ, ৩/২২৪ ও ৩/২২৯

 

 

advertisement