ছোট্ট রশীদ আহমদ
ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি জেলার নাম সাহারানপুর। অনেক কারণেই এই জেলাটি প্রসিদ্ধ। দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসা এ জেলাতেই অবস্থিত। এই জেলায় আছে গাঙ্গুহ নামে একটি গ্রাম। এই গ্রামে আজ থেকে দুইশ বছর আগে ১২৪৪ হিজরীর যিলকদ মাসে (১৮২৯ খ্রিস্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী। তার পিতা ছিলেন মাওলানা হেদায়েত আহমদ রাহ.। রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী-এর বয়স যখন মাত্র সাত বছর তখন তার পিতা ইনতেকাল করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বিনয়ী, বিচক্ষণ ও সহনশীল। যে কোনো সাধারণ কথা ও সাধারণ ঘটনা থেকেও তিনি জীবনের শিক্ষা গ্রহণ করতেন। কখনো কোনো বিষয়ে জিদ ধরতেন না।
ছোটবেলায় একবার তার খুব জ¦র হয়েছিল। প্রায় চার বছর ধারাবাহিক ছিল সেই জ¦র। এ সময় ডাক্তার তাকে শুধু মুগডালের খাবার খেতে বলেন। তিনি সত্যি সত্যি একাধারে চার বছর শুধু মুগডালের খাবারই খেয়েছেন। অন্য কোনো খাবারের আবদারও করেননি। অথচ এত দিন ধরে কেবল এক ধরনের খাবার খাওয়া বড় মানুষদের পক্ষেও অত্যন্ত কষ্টকর।
শৈশবেই তিনি ছিলেন নামাযের প্রতি খুব যত্নবান। নামাযের সময় হলে সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায় করতেন। সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে সাধারণত খেলাধুলা করতেন না। তবে মাঝে মধ্যে তাদের সঙ্গে খেলাধুলো করলেও নামাযের সময় হলে সাথে সাথে মসজিদে চলে যেতেন।
তার বয়স যখন সাত বছরের কাছাকাছি, তখন একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। একদিন বিকালে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তো চলতে চলতে তিনি গ্রাম পেরিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে গেলেন। ধীরে ধীরে সূর্যও ডুবতে লাগল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে হঠাৎ মাগরিব নামাযের কথা তার মনে পড়ল। তিনি সাথে সাথে ফেরার পথ ধরলেন। হাতে ছিল একগুচ্ছ ফুল। বড় বড় পা ফেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে ফুলের গুচ্ছ দিয়ে বললেন, ‘আম্মী, এটা রাখেন, আমি নামায পড়ে আসছি।’ দ্রুত ছুটে মসজিদে এসে দেখেন, মাগরিবের জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। তিনি ওযু করতে কুয়ার পাড়ে গেলেন। মনের মধ্যে জামাত ছুটে যাওয়ার পেরেশানি। কুয়ায় বালতি ফেললেন, কিন্তু তাড়াহুড়ো ও জামাতের চিন্তায় বেখেয়ালে বালতির রশি পায়ে পেঁচিয়ে গেল। তিনি রশির টানে কুয়ায় পড়ে গেলেন। বেশ জোরে শব্দ হল। মুসল্লিগণ বুঝতে পারলেন, কেউ কুয়ায় পড়ে গেছে। তখন জামাতের মাত্র এক রাকাত হয়েছে। তিনি কুয়ায় পড়ে গিয়ে কোনো চিৎকার-চেচামেচি করলেন না। আল্লাহ তাআলা তাকে এমন কুদরতীভাবে রক্ষা করলেন যে, তিনি যেই বালতিটি ফেলেছিলেন, সেটি উল্টো হয়ে রইল, আর তিনি তার উপর বসে থাকলেন। তার পায়ের আঙ্গুলে সামান্য আঘাত ছাড়া তেমন কিছুই হল না।
যখন জামাত শেষ হল, সবাই দৌড়ে কুয়ার পাড়ে এসে জড়ো হল। তিনি নিচ থেকে বললেন, আপনারা পেরেশান হবেন না, আমি সহীহ-সালামতে আছি। তারপর লোকজন তাকে উদ্ধার করল।
এই একটি ঘটনা থেকেই শিশু রশীদ আহমদের নামাযের আগ্রহ, আল্লাহমুখিতা এবং বিপদে ঘাবড়ে না যাওয়াসহ আরো অনেক গুণাবলির পরিচয় পাওয়া যায়।
মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহ.-এর সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন মাওলানা কাসেম নানুতবী রাহ.। তিনিও সাহারানপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা উভয়ে ছিলেন হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রাহ.-এর মুরীদ ও খলীফা এবং দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার মুরব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। মাওলানা কাসেম নানুতবী রাহ.-এর কথা আরেকদিন শোনাব।
তথ্যসূত্র : তাযকিরাতুর রশীদ পৃ. ২২