জুমাদাল আখিরাহ-শাবান ১৪৪৪   ||   জানুয়ারি-মার্চ ২০২৩

মটকা ভর্তি বই

ফয়জুল্লাহ মুনির

তোমরা নিশ্চয়ই ইমাম শাফেয়ীর নাম শুনেছ। মুহাম্মদ বিন ইদরীস শাফেয়ী। তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশীয়। মক্কার অনেক বড় আলেম। আমাদের ইমাম আবু হানিফা যেমন বিশাল একটি মাযহাবের ইমাম, তিনিও তেমন বিশাল একটি মাযহাবের ইমাম। জ্ঞানে-গুণে সবদিকে থেকেই তিনি ছিলেন অনেক বড় ব্যক্তি। কিন্তু এত বড় তিনি কীভাবে হলেন বলতে পারো? শোনো তাহলে!

বড় হতে হলে তো অনেক কষ্ট করতে হয়। ছোটবেলা থেকেই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। বিপদ-আপদে ধৈর্য না হারিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়।

যেই শিশুটির বাবা থাকে না, তার কিন্তু অনেক কষ্ট। আমাদের সবার বাবা আছে তো, এজন্য বুঝি না। ইমাম শাফেয়ীর কিন্তু সেই ছোট্ট বয়স থেকেই বাবা ছিল না। তিনি ছিলেন মায়ের কোলে একেবারে এতিম। মা একাই পুরো সংসারের খরচ চালাতেন। কোনরকমে কেটে যেত তাদের দিনকাল। ছোট্ট ইমাম শাফেয়ী এখন একটু বড় হয়েছে। মায়ের একমাত্র ইচ্ছা, ছেলেকে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। এজন্য এখন থেকেই মকতবে পাঠানো দরকার। কিন্তু উস্তাদজীর অযিফা দিবেন কীভাবে? মকতবের খরচ দেয়ার মতো টাকাও তো তার কাছে নেই।

অবশেষে আল্লাহর উপর ভরসা করে ছেলেকে একদিন তিনি মকতবে পাঠিয়ে দিলেন। শুরু হল ইমাম শাফেয়ীর পড়াশোনা। এখন তিনি নিয়মিত মক্তবে যান। সারাদিন পড়ে রাতে আবার বাসায় চলে আসেন। সেখানকার নিয়ম ছিল, উস্তাদজী প্রথমে সবাইকে শ্লেটে কুরআনের একটি আয়াত লিখিয়ে দিতেন। এরপর সেটা বারবার পড়িয়ে মুখস্থ করিয়ে দিতেন। ইমাম শাফেয়ীর মেধা ছিল খুবই প্রখর। সবাই যখন লিখত, তখনই তিনি সেটা মুখস্থ করে নিতেন। এজন্য উস্তাদজী কখনো কোনো প্রয়োজনে বাহিরে গেলে তাঁকে দিয়ে যেতেন। তিনি উস্তাদজীর মতোই চিৎকার করে করে সবাইকে পড়াতেন। এভাবে মাত্র সাত বছর বয়সেই ইমাম শাফেয়ীর পুরো কুরআন মাজীদ মুখস্থ হয়ে যায়। উস্তাদজীও তাঁর প্রতি ছিলেন খুবই সন্তুষ্ট। মাশাআল্লাহ! ছেলেটির যেই মেধা! তার কাছ থেকে অযিফা নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

হিফজ শেষ হওয়ার পর এবার হাদীস পড়বার পালা। এখন তো আমরা ইচ্ছামতন বই কিনে পড়তে শুরু করি। তখনকার অবস্থা কিন্তু এমন ছিল না। সেসময় বই পড়তে চাইলে নিজের বই নিজেকেই লিখে নিতে হতো। এজন্য লেখা যেমন জানা লাগবে, লেখার সরঞ্জামও তো লাগবে। ইমাম শাফেয়ীর কাছে এসব কিছুই নেই। কিন্তু কাজের লোকেরা কি জিনিসের অভাবে কখনও বসে থাকে! যেভাবেই হোক তিনি লিখবেন সংকল্প করে ফেললেন। ব্যাস্, উপায়ও বের হয়ে গেল। কখনো কখনো তিনি চলে যেতেন সরকারী অফিসে। সেখানে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় কাগজগুলো চেয়ে নিয়ে আসতেন। সেগুলোর একপিঠে লেখা থাকলেও অপর পিঠে যেই খালি জায়গাটুকু থাকতো, তিনি সেখানে লিখতেন। আবার কখনো পোড়া মাটি, শক্ত চামড়া, মসৃণ পাথর ইত্যাদির উপরও লিখতেন। এভাবে এক সময় হল কী! ইমাম শাফেয়ীর বাসায় তার আম্মুর বিরাট একটা মটকা ছিল। পুরো মটকা এসব লেখা দিয়ে ভরে গেল।

একবার কল্পনা করে দেখো তো, বিরাট একটা মটকাভর্তি শুধু বইপত্র! আমাদের যেমন থাকে আলমারি ভর্তি বই, উনার ছিল মটকাভর্তি বই। ইমাম শাফেয়ীর এমন মজার মজার আরো অনেক গল্প রয়েছে। সেসব আরেকদিন শোনাব ইনশাআল্লাহ!

তথ্যসূত্র : আদাবুশ শাফেয়ী ওয়া মানাকিবুহু, পৃ. ১৯-২১; আলইনতিকা, পৃ. ১২০; তারিখে বাগদাদ, ২/৬২-৬৩; মুজামুল উদাবা, ১৭/২৮৪

 

 

advertisement