নকল ডাক্তার
অনেক দিন আগের কথা। এক বনে বাস করত এক গাধা। বনটি ছিল যেমন সুন্দর তেমনি শান্তিপূর্ণ। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। অভাব বলতে কী জিনিস, জানে না এই বনের বাসিন্দারা। তবে ত্রুটি রয়েছে একটি জায়গায়। এত বড় বনটিতে ডাক্তার মাত্র কয়েকজন। তাই গাধা মনে মনে ভাবতে লাগল, আমাকে একজন ডাক্তার হতে হবে। কেননা এই বনে ডাক্তারের প্রচুর সম্মান।
যেই ভাবা সেই কাজ। গাধা চলে গেল বাজারে। কিনে আনল চিকিৎসার যন্ত্রপাতি। তারপর কানে স্টেথিস্কোপ লাগিয়ে গাধা বেরিয়ে পড়ল ডাক্তার বেশে। পথে দেখা হল হরিণের সাথে।
হরিণ বলল, ওহে গাধা! হঠাৎ এই বেশে কেন?
গাধা : হঠাৎ মানে! সেই কবে থেকেই তো চালাচ্ছি ডাক্তারি পড়ালেখা। মনে হয় তুমি বনবাসীর খবর রাখো না।
হরিণ : তুমি আবার কোথায় ডাক্তারি পড়েছো? বনের বাইরে তো তোমার পা-ই পড়তে দেখি না।
গাধা : কোথায় ডাক্তারি পড়েছি সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আজ আমি ডাক্তার হয়েছি। কখনো অসুস্থ হলে আমার কাছে চলে এসো। দেখবে, মুহূর্তেই সুস্থ হয়ে যাবে।
গাধা আবার চলতে শুরু করল । পথে সাক্ষাৎ হল শিয়ালের সাথে। শিয়াল বলল, আরে গাধা ভাই! এ আবার কোন্ বেশ ধরেছ?
গাধা : কোন্ বেশ মানে! অনেক সাধনার পর আজ আমি ডাক্তার হয়েছি। তাই রোগী দেখতে বেরিয়েছি।
চালাক শিয়াল মুচকি হেসে বলল, জীবনে অনেক ডাক্তার দেখেছি। কিন্তু তোমার মতো অভিজ্ঞ ডাক্তার কখনো দেখিনি। আমি অসুস্থ হলে তোমার কাছেই চলে আসব। দুষ্ট শিয়ালের মিষ্টি কথায় আর মিথ্যে প্রশংসায় গাধা খুশি হয়ে গেল।
এরপর ভীষণ আনন্দের সাথে বনের ভিতর ঘুরতে লাগল গাধা। পথে যার সাথেই দেখা হয় এই কথাটি বলতে ভোলে না যে, আমি ডাক্তার হয়েছি।
এদিকে দুষ্ট শিয়ালের মাথায় কুমতলব হাজির হল। সে সারা বনে প্রচার করে দিল যে, আমাদের বনের এক গাধা মস্ত বড় ডাক্তার হয়েছে। বহু রোগী তার চিকিৎসায় ভালো হয়েছে। এমনকি জটিল রোগও ভালো হয়ে যায়।
শিয়ালের মিথ্যা প্রচারে রোগীর ঢল নামল গাধার বাড়িতে। রোগী সামলাতে গাধা এখন বেসামাল। সে বিভিন্ন গাছের লতাপাতা দিয়ে রোগীদের বলতে লাগল, এটা খুব উপকারী ওষুধ, এটা দ্রুত কার্যকরী, এটা বহু পরীক্ষিত। এভাবেই মহাব্যস্ততার মাঝে গাধার সময় কাটতে লাগল।
হঠাৎ একদিন সিংহের পেট ব্যথা শুরু হল। পেটের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে সে ডাক্তার ! ডাক্তার! বলে চিৎকার শুরু করে দিল। কিছু প্রাণী দৌড়ে গিয়ে দ্রুত গাধাকে খবর দিল।
অসুস্থ সিংহের গর্জনে আগে থেকেই আতঙ্কিত ছিল গাধা। সেই আতঙ্কের মাঝেই এল সিংহের চিকিৎসার নির্দেশ। মহা মুসিবতে পড়ে গেল গাধা। মনে মনে বলতে লাগল, ডাক্তার হওয়ার চেয়ে না হওয়াই ভালো ছিল। এখন সিংহের কাছে গেলে আমার সব রহস্য ফাঁস হয়ে যাবে। সিংহ আমাকে খেয়েই ফেলবে। কিন্তু না গিয়েও যেহেতু উপায় নেই তাই গাধা শেষপর্যন্ত সিংহের আস্তানায় হাজির হল। জিজ্ঞাসা করল, মহারাজ! এখন কী অবস্থা আপনার?
সিংহ : প্রচণ্ড পেট ব্যথা। জলদি ওষুধ দাও। নইলে তোমাকে আস্ত খেয়ে ফেলব।
গাধা সঙ্গে নিয়ে আসা কতগুলো লতাপাতা সিংহকে দিয়ে বলল, এগুলো খেয়ে নিন। গাধার দেওয়া ওষুধ খাওয়ার সাথে সাথেই সিংহের পেট ব্যথা আরো বেড়ে গেল। প্রচণ্ড ব্যথায় সিংহ কাতরাতে লাগল।
এমন সময় সিংহের কাছে ছুটে এল হরিণ। সাথে নিয়ে এল একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার। ডাক্তার সিংহের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বলল, খুবই মামুলি বিষয়। এক্ষুণি সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তারপর ওষুধ দিলেন আসল ডাক্তার। একটু পরেই সুস্থ হয়ে গেল সিংহ।
এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিল গাধা। কিন্তু সিংহ সুস্থ হওয়ার সাথে সাথেই সে ছটফট শুরু করে দিল। গাধা মনে মনে ভাবতে লাগল, পরিস্থিতি এখন খুবই ভয়াবহ। যে কোনো মুহূর্তে সিংহ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তাই সময় থাকতেই কেটে পড়ি। ডানে বামে দেখে নিয়ে গাধা যেই না পালাতে গেল— সিংহ হুংকার দিয়ে বলল, দাঁড়াও!
সিংহ আসল ডাক্তারকে বলল, পরীক্ষা করো গাধাকে। আদৌ সে ডাক্তার কি-না দেখো। যাতে সবাই জানতে পারে ওর প্রকৃত অবস্থা। পরীক্ষা করে দেখা গেল, এই গাধা চিকিৎসাশাস্ত্রেও আস্ত গাধা।
সিংহ এবার গাধাকে বলল, কোথায় ডাক্তারি পড়েছ তুমি?
গাধা : মহারাজ! আমার একান্ত বাসনা, আমি একজন ডাক্তার হব। কেননা এটা আমার ছোটবেলার স্বপ্ন।
সিংহ : আমারও একান্ত বাসনা, আজ আমি তোমাকে খাব। কেননা আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত। অসুস্থতার কারণে শিকারে যেতে পারিনি। হয়ত আরো দু-একদিন যেতে পারব না।
এরপর সত্যি সত্যিই সিংহ গাধাকে খেয়ে ফেলল।
হরিণ শিয়ালকে বলল, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। কাজটা তুমি মোটেও ভালো করোনি। গাধার এই মৃত্যুর জন্য তুমিই দায়ী। কেননা, তুমিই মিথ্যে প্রশংসা করে গাধার ক্ষতি করেছ।
বন্ধুরা! দেখলে তো, ডাক্তার না হয়েও মিছেমিছি ডাক্তার সাজতে গিয়ে গাধার কী পরিণতি হল?! ডাক্তার হওয়ার বাসনা তো পূরণ হলই না, জীবনটাও খোয়াতে হল।
আর শিয়ালের মিথ্যে প্রশংসায় গাধার কী সর্বনাশ হল তা তো দেখলেই। এজন্য কেউ প্রশংসা করলেই তাতে খুশি হতে নেই। কারণ দুষ্ট লোকের প্রশংসা তোমার উপকার নয় শুধু ক্ষতিই করবে। সুতরাং সাবধান...!