খেজুর বাগানে
মদিনায় তখন খেজুর পাকার সময়। বাগানে বাগানে পাকা ও অর্ধ পাকা খেজুরের সমাহার। কাঁদি ভরা পাকা খেজুর বাগানের মালিকদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। হযরত জাবির রা.। মদীনার আনসারী সাহাবী। অধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের অন্যতম। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ ইবনে আমর। তিনিও রাসূলের সাহাবী ছিলেন। পিতা আব্দুল্লাহর ইন্তেকালের পর হযরত জাবির রা.ই এখন পরিবারের দেখাশোনা করেন। বাবার রেখে যাওয়া খেজুরের বাগানের মাধ্যমে তাদের সংসার চলে।
হযরত জাবির রা. গাছ থেকে খেজুর পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর মনে মনে পিতার রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধ করার বিষয়ে ভাবছেন। কারণ উহুদের যুদ্ধে জাবির রা.-এর পিতা শহীদ হন। পিতার অনেক ঋণ ছিল, যেটা পরিশোধের দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর।
বাগানের এই অল্প খেজুর দিয়ে পাওনাদারদের বিশাল ঋণ আদায় করতে গেলে কয়েক বছর সময় লাগবে। তাছাড়া পাওনাদাররাও এতদিন অপেক্ষা করতে রাজি হচ্ছে না। তাই কীভাবে এই ঋণ আদায় করবেন এ নিয়ে চিন্তিত জাবির রা.।
হযরত জাবির রা. বাগানের খেজুর নামানোর আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বিষয়টি জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যাও! প্রতিটি খেজুরের ভিন্ন ভিন্ন স্তুপ কর। (আজওয়া খেজুরের আলাদা স্তুপ। যায়দি খেজুরের আলাদা স্তুপ। অন্যান্যগুলোর আলাদা স্তুপ।)
জাবির রা. প্রতিটি খেজুরের ভিন্ন ভিন্ন স্তুপ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খবর দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাগানে এলেন এবং খেজুরের সবচেয়ে বড় স্তুপের চারপাশে তিনবার ঘুরে সেখানেই বসে পড়লেন। বরকতের জন্য দোয়া করলেন। পরে জাবির রা.কে বললেন, ‘পাওনাদারদের ডাকো!’।
হযরত জাবির রা. বলেন, পাওনাদারেরা এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে সবাইকে মেপে মেপে খেজুর দিতে শুরু করলেন। এমনকি আল্লাহ তাআলা আমার পিতার সকল ঋণ আদায় করে দিলেন।
হযরত জাবির রা. আরো বলেন, আমি শুধু চাচ্ছিলাম আমার পিতার ঋণগুলো আদায় হয়ে যাক। বাগানের খেজুর বোনদের জন্য ঘরে নিয়ে যেতে পারব তেমন কোনো আশা ছিল না। কিন্তু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়ার বরকতে) খেজুরের সবগুলো স্তুপ যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেল। এমনকি আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্তুপের কাছে বসে ছিলেন, সেই স্তুপের একটি খেজুরও কমেনি।
(সূত্র : সহীহ বুখারী, হাদীস ৪০৫৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৩৬৩৬)
সুবহানাল্লাহ!
দেখলে তো বন্ধুরা! আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়ার বরকত! জাবির রা.-এর সমস্ত ঋণ আদায় হয়ে গেল, অথচ খেজুর যা ছিল তা-ই রয়ে গেল!